ঢাকা,শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪

জনপ্রতিনিধিরা শ্রমিকদের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে পেকুয়ায়

স্টাফ রিপোর্টার, চকরিয়া :: কক্সবাজারের পেকুয়ায় কিছু দুর্নীতিবাজ জনপ্রতিনিধি ও তাদের গঠিত সিন্ডিকেট কর্মসৃজন প্রকল্পে নিয়োজিত হতদরিদ্র শ্রকিমদের কাছ থেকে অনুপ¯ি’তির অজুহাত তুলে সিংহভাগ টাকা হাতিয়ে নি”েছ বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা কোন কোন শ্রমিকের সমুদয় টাকা জোর করে নিয়ে নিয়েছে। এতে ঈদের আগেই শ্রমিকদের ঈদ আনন্দ ¤øান হয়ে যা”েছ। এনিয়ে কর্মসৃজন প্রকল্পের হতদরিদ্র শ্রমিক ও জনপ্রতিনিধিরা মুখোমুখী হয়ে পড়েছে। যে কোন মুহুর্তে সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এব্যাপারে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূর্বিতা চাকমা বলেছেন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যব¯’া নেওয়া হবে।

পেকুয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে জানা যায়; এ উপজেলায় ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসং¯’ান প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের ৫৮দিনের কাজ শেষ হয়েছে। পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়ন ও রাজাখালী ইউনিয়নে গত ২৭ এপ্রিল কর্মসৃজন প্রকল্পের তালিকাভূক্ত হতদরিদ্র শ্রমিকদের মোবাইলে উপ¯ি’তির মাষ্টার রোল অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নগদের মাধ্যমে দৈনিক ৪শত টাকা করে একত্রে মোবাইলে দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, পেকুয়া সদর ইউনিয়নে ৯৩২ জন শ্রমিকের মোবাইলে এ টাকা যায়। একই সাথে রাজাখালী ইউনিয়নের শ্রমিকদের মোবাইলে টাকা পাঠানো হয়েছে। অন্যান্য ইউনিয়নে আরও আগেই এ টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। পেকুয়া সদর ইউনিয়নে কর্মসৃজন প্রকল্পের তালিকাভূক্ত হতদরিদ্র শ্রমিকদের মোবাইল একাউন্টে নগদের মাধ্যমে টাকা যাওয়ার পর থেকে ইউপি চেয়ারম্যান. সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কথা বলে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য ও তাদের গঠিত সিন্ডিকেট সদস্যরা শ্রমিকদের কাছ থেকে কাজে অনুপ¯ি’তির অজুহাত দেখিয়ে সিংহভাগ টাকা হাতিয়ে নি”েছ। কারো কারো কাছ থেকে প্রাপ্ত সমুদয় টাকা নিয়ে নিয়েছে। যারা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায় তাদেরকে এ প্রকল্পে আর কাজ করতে দিবে না বলেও হুমকি দি”েছ বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

পেকুয়া সদর ইউনিয়নের ৮নং ওযার্ড পূর্ব মেহেরনামার মৃত নূর মোহাম্মদের ছেলে মোহাম্মদ শাকের জানান; তার মা রাশেদা বেগম কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিক। তার মায়ের মোবাইলে ১৭ হাজার ২শত টাকা গিয়েছে। কিš‘ ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. শাহেদুল ইসলাম তাদের ঘরে গিয়ে জোর করে সমুদয় টাকা নিয়ে যায়।

একই পাড়ার আবুল আহমদের ছেলে নুরু”ছফা জানান; তার মোবাইলে ১৭ হাজার ২শত টাকা যায়। ইউপি সদস্য তার কাছ থেকে জোর করে ১৩ হাজার টাকা নিয়ে যায়। ওই পাড়ায় আরও ১৫জন শ্রমিকের কাছ থেকে একইভাবে তাদের প্রাপ্ত সমুদয় টাকা নিয়ে নিয়েছে বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই ওয়ার্ডের বলির পাড়া মোরারপাড়া আবাসন প্রকল্পের জাহাঙ্গীর আলম জানান; শুক্রবার ইফতারের আগে তার ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. শাহেদুল ইসলাম ও তার সিন্ডিকেট সদস্য জনৈক দিদারসহ আরও কয়েকজন ওই আবাসন প্রকল্পে গিয়ে হুমকি ধামকি দিয়ে কাজে অনুপ¯ি’তির অজুহাত তুলে কয়েকজন শ্রমিকের মোবাইলে আসা সিংহভাগ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আরও অনেক শ্রমিককে অনুপ¯ি’তির টাকা ফেরত দিতে চাপাচাপি করেছে। জাহাঙ্গীর আলম তিনি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকেও শাসানো হয়েছে। এ ধরণের যারা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায় তাদেরকে দেখে নিবে বলেও হুমকি দিয়ে চলে যায়।

একই ওয়ার্ডের মোরারপাড়ার নাছির উদ্দিন জানান, তার কাছ থেকেও ইউপি সদস্য শাহেদুল ইসলাম ও তার সিন্ডিকেট সদস্য দিদার হুমকি দিয়ে সবটাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা চালা”েছ। টাকা না দিলে আগামীতে তাদেরকে কাজ করতে দেওয়া হবে না বলে শাসানো হয়েছে। একই ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডেও একই ঘটনা ঘটেছে। পেকুয়া সদর ইউনিয়নের প্রায় ওয়ার্ডে এই একই চিত্র বলে জানা গেছে।

অভিযোক্ত ইউপি সদস্য মো. শাহেদুল ইসলামের কাছ থেকে অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে এ প্রতিবেদকের সাথে স্বশরীরে দেখা করবেন বলে জানান। স্বশরীরে দেখা করার প্রয়োজন নেই বললে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেছেন; যার যার একাউন্টে টাকা পৌঁছেছে সেখান থেকে অপরজনে টাকা নেয় কিভাবে? তিনি আরও বলেছেন অফিস খুললে আমি তাদের ডেকে এনে ব্রিফিং করে দিব।

এ ব্যাপারে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূর্বিতা চাকমার কাছ থেকে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেছেন; এ ধরণের ঘটনায় কারো লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যব¯’া নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেছেন; আপনারাও মানা করেন কাউকে অন্যায্য কোন টাকা না দিতে।

পাঠকের মতামত: